Monday, September 07, 2020

একদিন পাখি.....

দেরী হয়ে গেছে আজকে জয়ন্তর, সকালের অ্যালার্ম থামিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। কোনোরকমে তৈরী হয়ে দরজা লাগিয়ে লিফ্টের button প্রেস করলো। বেসমেন্ট-এ এসে গাড়ি চালালো, দেখলো অন্যদিনের তুলনাতে আজকে গাড়ি বেশি রয়েছে। মেইন গেটের দিকে এগোচ্ছে, দেখলো society র মাঠে আজকে ভীড় বেশি, অনেকেই খেলাধুলো করছে, একটু অবাক হলো...আজকে কি তার মতন কারুরই কি দৈনন্দিন জীবনে routine follow করতে ইচ্ছে করছে না ? একটু হেসে গেটের দিকে এগিয়ে চললো। গেট থেকে সবে বেরিয়েছে এমন সময় মোবাইল এ এলার্ট বেজে উঠলো, Sunday Morning News ।  চমকে উঠলো জয়ন্ত, ভুলে গেছিলো আজকে রবিবার, শনিবার সে অনেকদিন পর বাড়িতে ছিল। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরে আসে জয়ন্ত। 

সোফার ওপর হতাশ হয়ে বসে পড়ে। অদ্ভুত একটা তিক্ততাতে ভরে যায় তার মন। গত দু-তিন বছর ধরে project- টাতে এতো বেশি জড়িয়ে পড়েছে যে জীবনের আসল সত্য গুলোকে সে ভুলে যাচ্ছে। সে ভুলে গেছে শনিবার তার এমনি ছুটি, অফিসের কাজের জন্য সে weekend  ছোট করে ফেলেছিলো। বিরক্ত লাগে নিজের ওপর, চুপ করে বসে থাকে....কখনো সিলিং, কখনো ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে। কিছুই দেখছে না, বুঝছে না, শুধু তাকিয়ে আছে, ভেবে চলেছে পুরোনো কথা। নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছে।

ঢাকুরিয়ার সেই বাড়ি, ছোটবেলার জীবন, Ballygunje এর স্কুল , I.I.T.-র  কলেজ লাইফ , I.I.M.-র career consciousness.....সব মনে পড়ে গেলো। স্কুল থেকে বেরোনোর পর থেকেই জয়ন্ত বাইরে বাইরে কাটিয়েছে, তাই বাঙালী লাইফস্টাইল এর বাইরে থাকতে সে অভ্যস্ত হয়ে  গেছিলো শুরুতেই। হয়তো তাই বম্বে এসে settle করে, মাঝে কিছুকাল বিদেশে থাকলেও মুম্বাই তার কর্মভূমি। তাই মুম্বাই এর জীবন, এখানকার লোকজন তার বন্ধু হলো। কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো, কলকাতার পুরোনো রুট থেকে বিচ্ছিন্ন হলো কিছুটা, কিন্তু এই জীবন সে উপভোগ করে....প্রায় ২৫ বছর কেটে গেছে এই শহরে..অনেক আনন্দ-দুঃখের স্মৃতি এখানে। কত আলাপ বিচ্ছেদ।


কতক্ষণ কেটে গেছেএইভাবে খেয়াল নেই, বৃষ্টির আওয়াজে ঘোর কাটে জয়ন্তর.....মাথা ধরে গেছে.....ঘড়িতে দেখলো দুটো বেজে গেছে....খিদে পাচ্ছে....উঠে পড়লো....স্নান সেরে নিল। ফ্রিজ এ কিছু বানানো নেই....ইচ্ছে করছে না বানাতে কিছু, দুটো Maggi র প্যাকেট নিয়ে বসিয়ে দিল, সঙ্গী black coffee। খেতে বসে মোবাইল দেখতে শুরু করলো, এই বাজে অভ্যেসটা অনেকদিন হয়েছে, রিমঝিম-এর সঙ্গে ঝগড়া হতো খুব খেতে বসে মোবাইল দেখা নিয়ে। Social মিডিয়ার ইনবক্সগুলো ভরে গেছে মেসেজএ, কয়েকটা দেখে কাটিয়ে দিল, খাওয়া শেষ করে বেডরুম এ চলে গেলো....টিভি চালিয়ে খাটে বসলো। ইন্ডিয়া র খেলা আছে ওয়ান-ডে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে....আগের মতন ভালো লাগে না দেখতে....batsman friendly করে charm নষ্ট করে দিয়েছে। তাও ঋজুর সঙ্গে দেখতো, ওর খেলা ধুলোতে খুব ইন্টারেস্ট....ফুটবলটা বেশ ভালো খেলে।

বৃষ্টি বেশ জোরে পড়ছে, আজকে হয়তো আর থামবে না, জল জমে যাবে শহরে....এই শহরের এটা একটা বড়ো অসুবিধে। দেয়ালের পর্দা সরিয়ে দিল। ঘরের wooden flooring ছিল রিমঝিম এর শখ আর glass wall টা জয়ন্তর। কত স্মৃতি এই ঘরে....ঋজু এই ঘরে বড় হয়েছে। কাঁচের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দারুন লাগে....সেই কারণেই এটা করা..আর সন্ধ্যে বেলা sky line টা। টিভি তা বন্ধ করে দিলো জয়ন্ত, আর এক কাপ কফি নিয়ে খাট ছেড়ে  rocker টাতে গিয়ে বসলো....বাইরের বৃষ্টি দেখছে....আর ভাবছে....

বৃষ্টি পড়লেই রিমঝিম এর কথা মনে পড়ে, এরকম এক দিনে একটা seminar এ আলাপ হয়েছিল, সেই আলাপ সম্পর্কে আর সম্পর্ক সংসারে পরিণত হয়। পাঁচ বছর হয়ে গেছে ওদের mutually agreed separation....ঋজুর কথা ভেবে এটাই ভালো ছিল। দিল্লীর ফ্ল্যাটে ওরা দুজন চলে গেছে, রিমিঝিম আবার career শুরু করতে পেরেছে....ঋজু ও নতুন বন্ধু পেয়েছে....ছুটিতে আসে ঋজু, রিমঝিম ও আসে..জয়ন্ত ও যায়....হয়তো স্বাভাবিক নয় এটা কিন্তু সম্পর্কটা একটা decent জায়গাতে আছে....সকলে সকলের স্বাধীনতা, শখ আল্হাদ, জীবন নিয়ে বেঁচে আছে.....ঝগড়াঝাটি, মনোমালিন্যর চেয়ে ভালো....ঋজুর জন্য ভালো, মেন্টাল ফ্রেমিংটা হয়তো better হবে, বুঝতে পারবে সব জিনিস ঠিক হয়না, ঠিক করা যায়না, কিন্তু তাও সুস্থ থাকত পারে। এই পরিণতির বেশির ভাগ দোষ জয়ন্তর, অফিস, career নিয়ে সে আটকে গেছিলো......অফিস পলিটিক্স এ বিরক্ত হয়ে গেছিলো এবং তার effect ব্যক্তিগত জীবনে পড়ছিলো। রিমঝিম আর জয়ন্তর এই সম্পর্কের শুরুটা ছিল ফোটোগ্রাফি, specially human ফোটোগ্রাফি.....প্রতি শনি-রবি ওরা বেরিয়ে পড়ত....জয়ন্ত সেই সময় দেয়াটা ভুলে গেলো!

বৃষ্টিটা কমে এসেছে....থামলে হাঁটতে বেরোবে জয়ন্ত। অনেকদিন গান শোনা হয়না ঠিক করে..হোম থিয়েটারটা চালিয়ে দিলো। সন্ধেবেলা মুম্বাইয়ের skyline দেখতে দেখতে গান শুনছে......ভাবছে কি করবে.....। .অর্থাভাব নেই....hobby গুলো dry হয়ে যাচ্ছে....আবার শুরু করবে।

হঠাৎ সেই গানটা বেজে উঠলো....

             "Main zindagi ka saath nibhaata chala gaya

               Har fikr ko dhuyen mein uraata chala gaya

               Barbaadiyon ka soz manana fizool tha

               Barbaadiyon ka jashn manaata chala gaya

              Jo mil gaya usi ko muqaddar samajh liya

              Jo kho gaya main usko bhulata chala gaya

              Gham aur khushi mein fark na mehsoos ho jahaan

              Main dil ko us maqaam pe lata chala gaya"

                                                                                 ............সব পরিষ্কার হয়ে গেলো জয়ন্তর সামনে।

"কাল সকালে গিয়ে resignation-টা দিয়ে দেব".......ফাইনাল করে ফেললো জয়ন্ত। নতুন করে কিছু শুরু করবে। এখন কিছুদিন বিশ্রাম......দিল্লী যাবে....রিমিঝিম -রিজুর সঙ্গে weekend ফোটোগ্রাফিতে বেরোবে..Old দিল্লী......গালিবের গলি, Kareem's এর কাবাব, parathewali গলি....তারপর কিছুদিন ঘুরে বেড়াবে....হয়তো আফ্রিকাতে ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি।

বৃষ্টি থেমে গেছে, গান বন্ধ করে বেরিয়ে পরে জয়ন্ত....রাতে আজকে Swiggy....Time for Celebration!!!


Sunday, September 06, 2020

একটি কাল্পনিক কথোপকথন

স্বর্গের নন্দন কাননে প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়েছেন কবিগুরু। আজকে প্রকৃতি যেন আনন্দরূপ। মর্ত্যলোকের মত এখানেও দিনে দিনে ভিড় বেড়ে চলেছে। কবি একটা নিভৃত কোনের দিকে এগিয়ে চলেন, ওদিকটাতে লোকের সমাগম কম। ওদিকে যেতে যেতে প্রাকৃতিক শোভা অনুভব করছেন কবি, একটি কণ্ঠ শুনতে পেলেন, ভোরের রেওয়াজে বসেছে কেউ, খালি গলাতে, আহা কি অদ্ভুত কণ্ঠস্বর। কিছু দূর এগোতেই দেখতে পেলেন, এ যে মহম্মদ রফি। কবিগুরু কিছু বললেন না গায়কের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনতে লাগলেন, ভৈরব রাগ, একটু দূরে দাঁড়ালেন। রফি একমনে গেয়ে চলেছেন, হঠাৎ কবির কাশির দমকে থেমে গেলেন। চেয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন।

লজ্জিত হয়ে উঠে দাঁড়ান গায়ক, হাত জোড় করে বলেন "ক্ষমা করবেন গুরুদেব, "আপনি  এসেছেন টের পাইনি, এ তো সাক্ষাৎ ভগবান ভক্তের কাছে, আপনি বসুন।"

"আরে করো কি রফি সাহেব, আমি তো তোমার সাধনায় বাধ সাধলাম, কি অপূর্ব গাইছিলে, আমি তোমাকে তুমি বলেই বলছি, আপনি বললে তোমাকে পর করে দেয়া হয়, তোমার সঙ্গে আলাপ যখন হয়েছে, আর মুক্তি নেই তোমার। "

খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন রফি, বিশ্বকবিকে প্রণাম করেন, "কতদিনের ইচ্ছে আপনার সঙ্গে দেখা করব কিন্তু সুযোগ হচ্ছিলো না। আপনার কাশি হয়েছে দেখছি, তাবিয়াত ঠিক আছে তো ?"

"সাহেব,শরীর ঠিক আছে, বৃদ্ধবয়েসে এসেছি, তাই এগুলো একটু আধটু লেগে থাকে, তবে ভালো কি জানতো বিনা ওষুধে সেরে যায়, ডাক্তার বদ্যিতে আমার বড় allergy।"

এ কথা সে কথা চলতে থাকে দুজনের, গায়কের কাছে এ যেন এক মহামিলন, কবির কাছে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। 

সহসা কবি বলে ওঠেন "তোমাকে গান গাইতে দেখে ভালো লাগলো, আমার তো আজকাল লেখা হয়না। বয়েসও হয়েছে, সময়ও অনেক পাল্টে গেছে, চতুর্দিকে এতো গতি হয়ে গেছে, লোকের জীবনে এতো অনিশ্চয়তা এসেছে কারুর আর ধৈর্য্য ধরে কিছু পড়ার মন নেই, কি করবে বাঁচবে, না সাহিত্য চর্চা করবে।" 

"ঠিকই বলেছেন গুরুদেব, লোকের  জীবন থেকে স্বস্তি চলে গেছে, গানের কথা-সুর সব তাই পাল্টে গেছে। গান বাজনা সাহিত্য সবই তো সময় এর প্রতিবিম্ব।"  

"খাসা বললে রফি সাহেব।" 

কিছুক্ষণের  নীরবতা......রফি বললেন "গুরুদেব আমার জীবনের একটা  দুঃখ আছে, এতো গান গেয়েছি, বাংলাতেও  গেয়েছি, নজরুলগীতি ও গেয়েছি, কিন্তু কেউ কখনো আপনার গান গাইতেই বলেনি আর আমিও সাহস করে কাউকে মনে ইচ্ছের কথা বলতে পারিনি।"

অট্টহাস্যে ভেঙে পড়েন কবি, "ভালো করেছো যে বলোনি কাউকে, তোমাকে ওরা গাইতে দিত না ঠিক করে, নিয়ম দেখিয়ে তোমার দম আটকে দিতো, হাঁস ফাসঁ করে পালিয়ে  বাঁচতে। স্কুল খুলেছিলাম খোলা মনে গড়ে ওঠার জন্য, উল্টে ওরা আমাকে নিয়মে বেঁধে ফেললো। তোমাকে বোঝে ওদের কি সাধ্যি। তুমি ভেবোনাহে এখন থেকে তোমার মুক্তি নেই, আমার গান আমি তোমার গলাতেই শুনবো। লোকে ঈশ্বর এর খোঁজে বেরোয় তুমি তো গলাতে ঈশ্বরকে বসিয়ে রেখেছো, তুমি তো Sufism এর প্রতীক।"

"তওবা তওবা, আপনি আমায় লজ্জা দেবেন না। আপনার লেখাতে তো সর্বত্র তাঁর অস্তিত্ব। "

কবি এবার লজ্জিত হন....আবার কিছুক্ষনের নীরবতা....রবীন্দ্রনাথ বলে ওঠেন, "বেলা বাড়ছে এবার যাবো, যাওয়ার আগে আমাকে একটা গান শোনাও" 

চমকে ওঠেন রফি, এ আবদার যেন তার জীবন ধন্য করে দিল কিন্তু কি গাইবেন বুঝে উঠে পারছেন না।

"অতো চিন্তা করোনা, তোমার গান গাও, সেই গান... ও দুনিয়া কে রাখবালে....আহা কি সুন্দর গেয়েছো ...কিংবা আমার ওরকম কোনো একটা ..." গায়কের বিহ্বলতা দেখে একটু কৌতুক করে কবি বলেন "এখন থেকে তো আমার গানে তোমার দিন কাটবে..মুক্তি নেই।"

স্থির হয়ে চোখ বুজে কিছুক্ষন ভাবেন রফি ... শুরু করেন ... "মহারাজ এ কি সাজে  ......"

গান শুনতে শুনতে আবেগে আপ্লুত হয়ে রুদ্ধ হয়ে যাই কবির কণ্ঠস্বর, অবিরত অশ্রু ধারায় ভিজে গেলো তার পোশাক....স্রষ্টা আর গায়ক দুজনের চোখ বন্ধ....জাগতিক দিকে আর মন নেই।

গান শেষ..আবার নীরবতা, গায়ক ভাবছেন তার জীবনের যেন ষোলকলা আজ পূর্ণ হলো। কবি ভাবছেন এ কি শুনলেন....এতো লোকের এতো রকম গায়কীতে শুনেছেন এই গান....কিন্তু এ তো সবার উর্দ্ধে, সাক্ষাত লালন এর গান....এই গানের অন্য মানে করে দিলেন গায়ক....ফকির এর প্রত্যাশা বিহীন ভালোবাসার কাছে ঈশ্বর ছোট হয়ে গেলো....সৃষ্টির কাছে স্রষ্টা আজ সত্যি ছোটো....এই যেন চেয়েছিলেন তিনি গানে বলতে....আপ্লুত হয়ে আর কিছু বললেন না রবীন্দ্রনাথ...জড়িয়ে ধরলেন রফিকে ....বললেন "অসংখ্য ধন্যবাদ....আজ চলি আবার আপনার সঙ্গে দেখা করবো..আজ কিছু লিখবো....চলি।"

রফি বুঝলেননা কি বলতে চাইছিলেন গুরুদেব....কিছুক্ষণ বসে থাকলেন....তরপর গান গাইতে গাইতে নিজের গন্তব্যের দিকে এগোলেন।


Disclaimer : The writing is a product of imagination of the author & intent is purely literary. Neither there is an attempt to establish any idea nor criticise any section or community of the society


Dangal

There are not many days when deep into the night the Country kept staring at the TV set or the Mobile Screen without the prospec...