দেরী হয়ে গেছে আজকে জয়ন্তর, সকালের অ্যালার্ম থামিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। কোনোরকমে তৈরী হয়ে দরজা লাগিয়ে লিফ্টের button প্রেস করলো। বেসমেন্ট-এ এসে গাড়ি চালালো, দেখলো অন্যদিনের তুলনাতে আজকে গাড়ি বেশি রয়েছে। মেইন গেটের দিকে এগোচ্ছে, দেখলো society র মাঠে আজকে ভীড় বেশি, অনেকেই খেলাধুলো করছে, একটু অবাক হলো...আজকে কি তার মতন কারুরই কি দৈনন্দিন জীবনে routine follow করতে ইচ্ছে করছে না ? একটু হেসে গেটের দিকে এগিয়ে চললো। গেট থেকে সবে বেরিয়েছে এমন সময় মোবাইল এ এলার্ট বেজে উঠলো, Sunday Morning News । চমকে উঠলো জয়ন্ত, ভুলে গেছিলো আজকে রবিবার, শনিবার সে অনেকদিন পর বাড়িতে ছিল। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরে আসে জয়ন্ত।
সোফার ওপর হতাশ হয়ে বসে পড়ে। অদ্ভুত একটা তিক্ততাতে ভরে যায় তার মন। গত দু-তিন বছর ধরে project- টাতে এতো বেশি জড়িয়ে পড়েছে যে জীবনের আসল সত্য গুলোকে সে ভুলে যাচ্ছে। সে ভুলে গেছে শনিবার তার এমনি ছুটি, অফিসের কাজের জন্য সে weekend ছোট করে ফেলেছিলো। বিরক্ত লাগে নিজের ওপর, চুপ করে বসে থাকে....কখনো সিলিং, কখনো ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে। কিছুই দেখছে না, বুঝছে না, শুধু তাকিয়ে আছে, ভেবে চলেছে পুরোনো কথা। নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছে।
ঢাকুরিয়ার সেই বাড়ি, ছোটবেলার জীবন, Ballygunje এর স্কুল , I.I.T.-র কলেজ লাইফ , I.I.M.-র career consciousness.....সব মনে পড়ে গেলো। স্কুল থেকে বেরোনোর পর থেকেই জয়ন্ত বাইরে বাইরে কাটিয়েছে, তাই বাঙালী লাইফস্টাইল এর বাইরে থাকতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো শুরুতেই। হয়তো তাই বম্বে এসে settle করে, মাঝে কিছুকাল বিদেশে থাকলেও মুম্বাই তার কর্মভূমি। তাই মুম্বাই এর জীবন, এখানকার লোকজন তার বন্ধু হলো। কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো, কলকাতার পুরোনো রুট থেকে বিচ্ছিন্ন হলো কিছুটা, কিন্তু এই জীবন সে উপভোগ করে....প্রায় ২৫ বছর কেটে গেছে এই শহরে..অনেক আনন্দ-দুঃখের স্মৃতি এখানে। কত আলাপ বিচ্ছেদ।
কতক্ষণ কেটে গেছেএইভাবে খেয়াল নেই, বৃষ্টির আওয়াজে ঘোর কাটে জয়ন্তর.....মাথা ধরে গেছে.....ঘড়িতে দেখলো দুটো বেজে গেছে....খিদে পাচ্ছে....উঠে পড়লো....স্নান সেরে নিল। ফ্রিজ এ কিছু বানানো নেই....ইচ্ছে করছে না বানাতে কিছু, দুটো Maggi র প্যাকেট নিয়ে বসিয়ে দিল, সঙ্গী black coffee। খেতে বসে মোবাইল দেখতে শুরু করলো, এই বাজে অভ্যেসটা অনেকদিন হয়েছে, রিমঝিম-এর সঙ্গে ঝগড়া হতো খুব খেতে বসে মোবাইল দেখা নিয়ে। Social মিডিয়ার ইনবক্সগুলো ভরে গেছে মেসেজএ, কয়েকটা দেখে কাটিয়ে দিল, খাওয়া শেষ করে বেডরুম এ চলে গেলো....টিভি চালিয়ে খাটে বসলো। ইন্ডিয়া র খেলা আছে ওয়ান-ডে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে....আগের মতন ভালো লাগে না দেখতে....batsman friendly করে charm নষ্ট করে দিয়েছে। তাও ঋজুর সঙ্গে দেখতো, ওর খেলা ধুলোতে খুব ইন্টারেস্ট....ফুটবলটা বেশ ভালো খেলে।
বৃষ্টি বেশ জোরে পড়ছে, আজকে হয়তো আর থামবে না, জল জমে যাবে শহরে....এই শহরের এটা একটা বড়ো অসুবিধে। দেয়ালের পর্দা সরিয়ে দিল। ঘরের wooden flooring ছিল রিমঝিম এর শখ আর glass wall টা জয়ন্তর। কত স্মৃতি এই ঘরে....ঋজু এই ঘরে বড় হয়েছে। কাঁচের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দারুন লাগে....সেই কারণেই এটা করা..আর সন্ধ্যে বেলা sky line টা। টিভি তা বন্ধ করে দিলো জয়ন্ত, আর এক কাপ কফি নিয়ে খাট ছেড়ে rocker টাতে গিয়ে বসলো....বাইরের বৃষ্টি দেখছে....আর ভাবছে....
বৃষ্টি পড়লেই রিমঝিম এর কথা মনে পড়ে, এরকম এক দিনে একটা seminar এ আলাপ হয়েছিল, সেই আলাপ সম্পর্কে আর সম্পর্ক সংসারে পরিণত হয়। পাঁচ বছর হয়ে গেছে ওদের mutually agreed separation....ঋজুর কথা ভেবে এটাই ভালো ছিল। দিল্লীর ফ্ল্যাটে ওরা দুজন চলে গেছে, রিমিঝিম আবার career শুরু করতে পেরেছে....ঋজু ও নতুন বন্ধু পেয়েছে....ছুটিতে আসে ঋজু, রিমঝিম ও আসে..জয়ন্ত ও যায়....হয়তো স্বাভাবিক নয় এটা কিন্তু সম্পর্কটা একটা decent জায়গাতে আছে....সকলে সকলের স্বাধীনতা, শখ আল্হাদ, জীবন নিয়ে বেঁচে আছে.....ঝগড়াঝাটি, মনোমালিন্যর চেয়ে ভালো....ঋজুর জন্য ভালো, মেন্টাল ফ্রেমিংটা হয়তো better হবে, বুঝতে পারবে সব জিনিস ঠিক হয়না, ঠিক করা যায়না, কিন্তু তাও সুস্থ থাকত পারে। এই পরিণতির বেশির ভাগ দোষ জয়ন্তর, অফিস, career নিয়ে সে আটকে গেছিলো......অফিস পলিটিক্স এ বিরক্ত হয়ে গেছিলো এবং তার effect ব্যক্তিগত জীবনে পড়ছিলো। রিমঝিম আর জয়ন্তর এই সম্পর্কের শুরুটা ছিল ফোটোগ্রাফি, specially human ফোটোগ্রাফি.....প্রতি শনি-রবি ওরা বেরিয়ে পড়ত....জয়ন্ত সেই সময় দেয়াটা ভুলে গেলো!
বৃষ্টিটা কমে এসেছে....থামলে হাঁটতে বেরোবে জয়ন্ত। অনেকদিন গান শোনা হয়না ঠিক করে..হোম থিয়েটারটা চালিয়ে দিলো। সন্ধেবেলা মুম্বাইয়ের skyline দেখতে দেখতে গান শুনছে......ভাবছে কি করবে.....। .অর্থাভাব নেই....hobby গুলো dry হয়ে যাচ্ছে....আবার শুরু করবে।
হঠাৎ সেই গানটা বেজে উঠলো....
"Main zindagi ka saath nibhaata chala gaya
Har fikr ko dhuyen mein uraata chala gaya
Barbaadiyon ka soz manana fizool tha
Barbaadiyon ka jashn manaata chala gaya
Jo mil gaya usi ko muqaddar samajh liya
Jo kho gaya main usko bhulata chala gaya
Gham aur khushi mein fark na mehsoos ho jahaan
Main dil ko us maqaam pe lata chala gaya"
............সব পরিষ্কার হয়ে গেলো জয়ন্তর সামনে।
"কাল সকালে গিয়ে resignation-টা দিয়ে দেব".......ফাইনাল করে ফেললো জয়ন্ত। নতুন করে কিছু শুরু করবে। এখন কিছুদিন বিশ্রাম......দিল্লী যাবে....রিমিঝিম -রিজুর সঙ্গে weekend ফোটোগ্রাফিতে বেরোবে..Old দিল্লী......গালিবের গলি, Kareem's এর কাবাব, parathewali গলি....তারপর কিছুদিন ঘুরে বেড়াবে....হয়তো আফ্রিকাতে ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি।
বৃষ্টি থেমে গেছে, গান বন্ধ করে বেরিয়ে পরে জয়ন্ত....রাতে আজকে Swiggy....Time for Celebration!!!
No comments:
Post a Comment