হেঁশেলে আনমনে বসে দুর্গা, চোখে জল, হাতে হাত পাখা, পরনে লাল পেড়ে শাড়ি | সামনে উনুনে ভাত চড়ানো, মন নেই সেই দিকে, ভাতের মাড় গড়িয়ে উনুনে পড়ছে | এমন সময় ছুটতে ছুটতে গনেশ এসে ঢুকলো |
গনেশ : মা ভাতের মাড় পড়ে যাচ্ছে, একি তুমি কাঁদছো কেন ? দাদা, দিদি দেখো, মা কাঁদছে |
সম্বিৎ ফিরে পায় দুর্গা, তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে ভাতের হাঁড়িটা ঠিক করে | গনেশের ডাক শুনে এক এক করে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক সবাই ছুটে আসে | দুর্গা গনেশকে কোলে তুলে নেয়, সকলের ছোট, সকলের আদরের |
লক্ষী : কাঁদছো কেন মা, কি হলো, কেউ কিছু বললো, নাকি বাবার সঙ্গে ঝগড়া হলো ?
সরস্বতী : এখন ঝগড়াঝাটি করোনা, আর কয়েকদিন পর মামারবাড়ি যাওয়া, প্রতিবার এই মনোমালিন্য আর ভালো লাগেনা |
দুর্গা : না রে, কারুর সঙ্গে এবার কিছুই হয়নি, সেই পরিবেশও নেই, সকলেই খুব চিন্তিত, বস কথা বলি তোদের সঙ্গে, জরুরি কথা | দেখ তোরা বড় হয়েছিস, অনেক কিছু বুঝতে শিখেছিস, এবার একটু দায়িত্ব নিতে হবে মামারবাড়ি গিয়ে, আমোদ প্রমোদে শুধু দিন কাটানো যাবে না | মামারবাড়ির অবস্থা এবার ভালো নয়, একটা ব্যাধি এসেছে, তাতে দুনিয়া তটস্থ, কাজকর্ম সব মাথায় উঠেছে, চতুর্দিকে আর্থিক অনটন, চাকরিবাকরি নেই লোকের, এরপর হয়তো অনাহার আসবে |
কার্তিক : তাই বলে ওখানে গিয়ে কাজ ? সাজবো গুজবো, মেয়ে দেখবো, ঘুরবো ফিরবো |
সরস্বতী : হাঁ ওদের জ্বালা ওরা বুঝুক, আমরা মাথা ঘামাবো কেন ?
দুর্গা ক্রোধের সঙ্গে কার্তিককে ধমক দেয়, "তোর এই handsome mode থেকে বেরিয়ে কাজে মন দে, বয়েস হয়েছে, বিয়ে না করলে না করবি, ধিঙ্গিপনা করে বেড়াবার বয়েস আর নেই, দায়িত্ব পালন করতে শেখ |"
তারপর সরস্বতীকে "লেখা পড়া শিখলি, women empowerment এর নামে বিয়ে করলি না, সমাজে example set করবি বলে, এই তার নমুনা !"
সকলকে উদেশ্য করে, " দেখ এইবার গিয়ে যা বলছি তা না করলে পরের বছর থেকে আমি আর যাবো না | মনে রাখিস মামারবাড়ির লোক না থাকলে আমরাও নেই এই দুনিয়াতে, ওরা আছে বলে আমরা আছি |"
মায়ের অভিমান দেখে সকলে বুঝলো ভুল হয়েছে, ব্যাপারটা বেশ serious, না শুনে উপায় নেই, গোল হয়ে মায়ের আদেশ শুনতে বসলো |
দুর্গা : গনেশ, তুই তো কয়েকদিন আগে গেলি,, কি দেখলি কি বুঝলি ?
গনেশ : আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সব কেমন ঝিমিয়ে, লোকের মনে আনন্দ নেই |
দুর্গা : লক্ষী, নাড়ুগোপাল কি বলছে, ওতো গেছিলো একদিনের জন্য |
লক্ষী : বেশি কিছু বলেনি, বললো ভালো না আবহাওয়া |
দুর্গা : ঠিক আছে শোন্, আমি তোদের বলছি, যতটা জানি, তোদের কি করতে হবে সব..মাঝে কেউ কথা বলবি না, মন দিয়ে শুনবি আর গিয়ে কি করে কি করবি তার foolproof plan করবি যাওয়ার আগে |
দুর্গা শুরু করে....
"Covid-19 নামে একটা মহামারী ভাইরাস এসেছে তাতে দুনিয়া ওলোট পালট হয়ে গেছে | বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে, আরো হবে, অসংখ্য লোকে অসুস্থ হচ্ছে রোজ, কিন্তু চিকিৎসা বেরোচ্ছে না | লোকে নানারকম precaution নিচ্ছে কিন্তু কার্যত কিছুই লাভ হচ্ছে না | ডাক্তার, বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, নেতাদের রাতে ঘুম নেই | আমাদের কিছু হবে না হয়তো, কিন্তু চোখের সামনে ওদের ওই অবস্থা দেখি কি করে, আর ওরা না থাকলে আমরা কৈ ? তাই এবার গিয়ে কাজ করতে হবে, উভয় সংকট |
সরস্বতী, গিয়ে প্রথমে বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে মিটিং করবি, Vaccine এর update নিবি, কি অসুবিধে হচ্ছে, কি কি করলে সুবিধে হয়, যাতে তাড়াতড়িও হয় আবার quality issue না হয় | দরকার হলে নিজে lab এ ঢুকে যাবি, ওষুধ বের করতেই হবে |
কার্তিক, সমস্ত দেশের সামরিক বাহিনী আর নেতৃত্বদের নিয়ে বসবি, এই সময় আর যেন যুদ্ধ ইত্যাদি না করে | দেশের internal conflicts গুলোকে এখন ঠান্ডা রাখতে বলবি, লোকে এমনি অস্থির |
গনেশ, প্রথমে সমস্ত বাণিজ্যপতিদের সঙ্গে দেখা করে এই আর্থিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজে বার করবি | লোকের রোজগারের রাস্তা কিভাবে আবার খুলে দেয়া যায় সেটা দেখা
সব চেয়ে জরুরি | মানুষকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাতে হবে |
দ্বিতীয়, ওষুধ বেরোলে সেটা কি করে লোকের হাতে পোঁছবে তার plan পাকা করে আসবি, কালো বাজারি হয় না যেন এই নিয়ে | কার্তিক কে সঙ্গে নিয়ে নিবি, সামরিকবাহিনী আর বানিজ্যপতিদের এক সঙ্গে এই কাজে নামতে হবে নাহলে এতো লোকের কাছে তাড়াতড়ি পৌঁছনো যাবে না |
লক্ষী, নারায়ণের সঙ্গে details এ একটু আলোচনা করবি, কি অসুবিধে, কি করা যাবে কি ভাবে করা যাবে | In fact বাণিজ্যপতিদের সঙ্গে meeting এ তুই গনেশের সঙ্গে যাবি, দুজনের পরামর্শ লাগবে এখান থেকে বেরোতে |
এইটুকু তোরা কর, বাকি আমি দেখি কি করতে পারি | যাওয়ার আগে আমি ব্রহ্মা আর নারায়ণের সঙ্গেও একবার দেখা করবো, ওঁদের কি মতামত, শেষমেষ তো ওরা আর তোদের বাবা মিলিয়ে final management decision হবে | বিশ্বকর্মার সঙ্গেও দেখা করতে হবে, উনি তো আগে ঘুরে আসছেন, কি দেখলেন, কি মতামত, সবচেয়ে বড় হলো এরকম বিপদ এলো কি করে, আগে কি উপায় যাতে ভবিষ্যতে না আসে এরকম কিছু |
তারপর সব শেষে তোদের বাবার সঙ্গে কথা বলবো, সে তো আবার আপন ভোলা লোক, কি ভাবে কি করে কেউ বোঝে না, নিজেও বোঝে কিনা আমার মাঝে মাঝে doubt হয় | আমি তো corporate angle এ দেখি না, হাজার হোক আমার বাবার বাড়ির লোক, তাদের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে, কি ভাববে তারা, কত আশা ওঁদের আমাকে ঘিরে |"
দুর্গা থামলো, থমথমে পরিবেশ, সকলেই বুঝলো খুব কঠিন সময়, উপায় বের না করলেই নয় |
এই গাম্ভীর্য্য হালকা করতে গনেশ পেটে হাত বোলাতে বোলাতে বলে ওঠে "তা যাই বল মা, মামারবাড়ি যাবো, দুটি ভালো মন্দ খাবো না, নতুন জামা পরব না ? বছরে একবারই তো যাই ! "
দুর্গা মৃদু হেসে, গনেশ এর কান মুলে দেয়...বলে..."এবার আমরা পুরোনো যা আছে তাই পরে যাবো, যদি কেউ কিছু দেয় পরব, নাহলে পুরোনো যা পেয়েছি | মামারবাড়িতে এবার কে পরতে পারবে কে পারবে না জানি না, ওদের সামনে এবার সাজগোজ করে যাবো না | "
লক্ষী : ঠিকই বলেছো, সম্বরণ করতে হবে, এটাই এবারের Theme |"
সকলের অট্টহাসি |
দুর্গা : মামারবাড়ি যাচ্ছিস, আদরের অভাব হবে না, মন খুলে আদর যত্ন করবে, আড়ম্বর করতে পারবে না | তোরা মানিয়ে নিবি, প্রতি বছর তো কত কি দেয়, কত কি করে, এবার শুধু ভালোবাসা তা নিয়ে আয় | আর কাজগুলো করে ওদের উপকার কর | বৈজ্ঞানিকরা অনেক করছে, কিন্তু এবার মিলিত প্রচেষ্টার সময় এসে গেছে | জাত ধর্ম, দেশ সবার উপরে, মানবিকতার ধর্মের পরীক্ষা এবার |
আবার নিস্তব্ধতা
"ভাত হয়ে গেছে তোরা স্নান করে নে, খাবার সময় হয়ে গেলো |"
একে একে সকলের গাত্রোত্থান |
Picture Courtesy : Google
Disclaimer : The story is fully fictitious & based on personal imagination of social & cultural context and trends. This is not intended to hurt anyone's feeling & sentiment.
No comments:
Post a Comment